ইনফো

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদবী অনুযায়ী বেতন কাঠামো: আকর্ষণীয় সেনা বেতন গ্রেড ও সুযোগ-সুবিধা

Bangla Gup

Published on:


বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বেতন কাঠামো অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং পদমর্যাদা, অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার ভিত্তিতে নির্ধারিত। সেনাবাহিনীর সদস্যরা মূল বেতনের পাশাপাশি বিভিন্ন ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পায়েন, যা তাদের চাকরিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সেনাবাহিনীর জন্য ৪২৩.৬ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১১% বৃদ্ধি নির্দেশ করে।


বেতনের শ্রেণিবিন্যাস: পদমর্যাদা অনুযায়ী

১. কমিশন্ড অফিসার (Commissioned Officer)

কমিশন্ড অফিসাররা সেনাবাহিনীর উচ্চতর পদমর্যাদার অধিকারী। তাদের বেতন কাঠামো নিম্নরূপ:

সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট
৩০,০০০
লেফটেন্যান্ট
৩২,০০০
ক্যাপ্টেন
৩৭,০০০
মেজর
৪৫,০০০
লেফটেন্যান্ট কর্নেল
৫২,০০০
কর্নেল
৬০,০০০
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল
৭০,০০০
মেজর জেনারেল
৮০,০০০
লেফটেন্যান্ট জেনারেল
৮৮,০০০
জেনারেল
১,০০,০০০

উল্লেখ্য, এই মূল বেতনের সাথে বিভিন্ন ভাতা যোগ হয়ে মোট বেতন আরও বেড়ে যায়।


২. জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার (JCO)

জুনিয়র কমিশন্ড অফিসারদের বেতন কাঠামো নিম্নরূপ:

ওয়ারেন্ট অফিসার
২৫,০০০
সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার
২৭,০০০
মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার
২৯,০০০

৩. নন-কমিশন্ড অফিসার (NCO) ও সাধারণ সৈনিক

নন-কমিশন্ড অফিসার এবং সাধারণ সৈনিকদের বেতন কাঠামো নিম্নরূপ:

সৈনিক
৯,৫০০
ল্যান্স কর্পোরাল
১০,৫০০
কর্পোরাল
১১,৫০০
সার্জেন্ট
১৭,০০০

বেতনের অন্যান্য উপাদান: ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা

সেনাবাহিনীর সদস্যরা মূল বেতনের পাশাপাশি বিভিন্ন ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পায়েন। এর মধ্যে রয়েছে:

  1. মহার্ঘ ভাতা: মূল্যস্ফীতি ও বাজার দরের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই ভাতা দেওয়া হয়।
  2. বাড়ি ভাড়া ভাতা: নিজস্ব বা ভাড়া বাসার জন্য এই ভাতা দেওয়া হয়।
  3. যাতায়াত ভাতা: কর্মস্থলে যাতায়াতের জন্য এই ভাতা দেওয়া হয়।
  4. পোশাক ভাতা: পোশাক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এই ভাতা দেওয়া হয়।
  5. কঠিন এলাকা ভাতা: দুর্গম এলাকায় কাজ করার জন্য এই ভাতা দেওয়া হয়।
  6. বিমান ভাতা: বিমান বাহিনীর কর্মীদের জন্য এই ভাতা দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, বিশেষ মিশন, উচ্চতা, প্যারাশুট ইত্যাদির জন্য বিভিন্ন ধরনের বোনাস ও অতিরিক্ত বেতন দেওয়া হয়।


বেতন নির্ধারণে প্রভাবক উপাদান

সেনাবাহিনীতে বেতন নির্ধারণে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি প্রভাব ফেলে:

  1. পদমর্যাদা: উচ্চ পদমর্যাদার সাথে বেতনও বাড়ে।
  2. চাকরির বয়স: অভিজ্ঞতার সাথে সাথে বেতন বৃদ্ধি পায়।
  3. শিক্ষাগত যোগ্যতা: উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে বেতন বেশি হয়।
  4. বিশেষ দক্ষতা: বিশেষ প্রশিক্ষণ বা দক্ষতার জন্য অতিরিক্ত ভাতা দেওয়া হয়।
  5. কর্মস্থল: দুর্গম এলাকায় কাজ করলে অতিরিক্ত ভাতা দেওয়া হয়।

বেসামরিক চাকরির সাথে তুলনা

সেনাবাহিনীর বেতন কাঠামো বেসামরিক চাকরির তুলনায় অনেক আকর্ষণীয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার প্রকৌশলী অফিসার মাসে প্রায় ৭০,০০০ টাকা আয় করেন, যা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সমপর্যায়ের প্রকৌশলীর বেতনের সমান। এছাড়াও চাকরির নিরাপত্তা, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা ও পেনশন সুবিধা বিবেচনা করলে সেনাবাহিনীর চাকরি অনেক বেশি আকর্ষণীয়।


সাম্প্রতিক বেতন বৃদ্ধি

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশ সরকার সেনাবাহিনীর জন্য ৪২৩.৬ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ করেছে। এর মধ্যে ৩৮৭.৯ বিলিয়ন টাকা পরিচালন ব্যয় এবং ১২.৮৪ বিলিয়ন টাকা উন্নয়ন ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে। এর ফলে সেনা সদস্যদের বেতন ও ভাতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।



বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বেতন কাঠামো অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং আকর্ষণীয়। পদমর্যাদা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে বেতন ও ভাতা নির্ধারণ করা হয়। সরকার নিয়মিতভাবে সেনাবাহিনীর বাজেট বৃদ্ধি করছে, যার ফলে সেনা সদস্যদের আর্থিক সুবিধাও বাড়ছে। তবে শুধু আর্থিক দিক দিয়ে নয়, দেশসেবার সুযোগ, সামাজিক মর্যাদা ও চাকরির নিরাপত্তার কারণেও সেনাবাহিনীতে যোগদান একটি আকর্ষণীয় পেশা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।