বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জানুয়ারি মাসের বেতন-ভাতা ছাড়ের প্রস্তাব এখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি। এর ফলে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন কবে পাওয়া যাবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না।
কেন বেতনের প্রস্তাব পাঠানো হয়নি?
মাউশি সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) পদ্ধতিতে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও অনেকগুলো কাজ এখনো অ্যানালগ পদ্ধতিতে করা হচ্ছে। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কতজন শিক্ষক-কর্মচারী ইএফটিতে বেতন পাবেন, সেই তথ্য প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির অনুমোদনের মাধ্যমে পাঠাতে হচ্ছে।
অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো জানুয়ারি মাসের বেতনের তথ্য মাউশির ইএমআইএস (Education Management Information System) সেলে পাঠায়নি। ফলে মাউশিও বেতনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারেনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব (বাজেট) লিউজা-উল-জান্নাহ বলেন,
"বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের জানুয়ারি মাসের বেতন-ভাতার প্রস্তাব এখনো পাইনি। প্রস্তাবনা পাওয়ার দ্রুত সময়ের মধ্যে তা অনুমোদন করা হবে।"
তিনি আরও বলেন, মাউশি থেকে প্রস্তাব পাঠানোর পর মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে বেতন ছাড়ের অনুমোদন নিতে হয়। এই প্রক্রিয়াটি কখনো একদিনের মধ্যে সম্পন্ন হয়, আবার কখনো কর্মকর্তা অনুপস্থিত থাকলে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।
ইএফটি পদ্ধতি কীভাবে কাজ করবে?
গত ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছিল যে, বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওর বেতন-ভাতা ইএফটি পদ্ধতিতে দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অক্টোবর মাসের বেতন ইএফটি পদ্ধতিতে ছাড় হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে:
- ১ জানুয়ারি: ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক ইএফটির মাধ্যমে বেতন পেয়েছেন।
- দ্বিতীয় ধাপে: ৬৭ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী ডিসেম্বর-২০২৪ মাসের বেতন পেয়েছেন।
- তৃতীয় ধাপে: ৮৪ হাজার ৭০০ শিক্ষক-কর্মচারী বেতন পেয়েছেন।
- চতুর্থ ধাপে: ৮ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী বেতন পাবেন।
বেতন ছাড়ের সময়সূচী কী?
বর্তমানে বেতন ছাড়ের সঠিক সময়সূচী নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। মাউশি থেকে প্রস্তাব পাঠানোর পর মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে অনুমোদন নেওয়ার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে বেতন ছাড় হবে। সাধারণত এই প্রক্রিয়াটি একদিন থেকে কয়েকদিন সময় নিতে পারে।
শিক্ষক-কর্মচারীদের চ্যালেঞ্জ
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগার থেকে ছাড় হলেও তা রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে ‘অ্যানালগ’ পদ্ধতিতে ছাড় হয়। এই অর্থ তুলতে শিক্ষকদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হতো। ইএফটি পদ্ধতি চালু হওয়ার পর এই সমস্যা কিছুটা কমেছে, তবে প্রক্রিয়াটি এখনো সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় হয়নি।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য (FAQ)
Q: জানুয়ারি মাসের বেতন কবে পাওয়া যাবে?
A : বর্তমানে বেতনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি। প্রস্তাব পাঠানোর পর অনুমোদনের জন্য কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।
Q: ইএফটি পদ্ধতি কীভাবে কাজ করে?
A : ইএফটি পদ্ধতিতে বেতন সরাসরি শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়। এটি অ্যানালগ পদ্ধতির চেয়ে দ্রুত এবং নির্ভুল।
Q: কেন অনেক শিক্ষক এখনো বেতন পাচ্ছেন না?
A : অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো তথ্য মাউশির ইএমআইএস সেলে পাঠায়নি। ফলে প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হচ্ছে।